কলকাতা প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের প্রথম সম্মেলন, সাংবাদিকদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষার দাবি জোরালো
কলকাতা প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের প্রথম রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ডিজিটাল সাংবাদিকদের আইনি স্বীকৃতি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবীমা, সরকারি অনুমোদন ও বিজ্ঞাপনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি তোলা হয়। শাসক ও বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য ডিজিটাল মিডিয়ার স্বাধীনতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিটি জেলায় সম্মেলন করে ডিজিটাল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ করা হবে এবং সত্য সংবাদ পরিবেশনের আন্দোলন জারি থাকবে।

বর্তমান যুগে ডিজিটাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি। কিন্তু জনপ্রিয়তা বাড়লেও, সংবাদ সংগ্রহ থেকে প্রচার— প্রতিটি ধাপে নানান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় ডিজিটাল সাংবাদিকদের। মূলধারার মিডিয়ার মতো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও মেলে না। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, ‘ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশন’ গঠন করেছে একঝাঁক ডিজিটাল সাংবাদিক। রবিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হল তাদের প্রথম রাজ্য সম্মেলন।
এই ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের সর্ব প্রথম রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠানে কলকাতা দর্পণ এর তরফ থেকে উপস্থিত ছিলাম আমি (তথাগত) ও আমার সহ কর্মী । এই রাজ্য সম্মেলনে উপদেষ্ঠা এবং DMF কর্তারা - প্রেসিডেন্ট দীপক ব্যাপারী (আমন্ত্রক), ভাইস প্রেসিডেন্ট সপন কারিগর, সেক্রেটারি সাকিরুল, কোষাদক্ষ বাদশা, টেকনিকালে হাসিবুর সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতি, সুরক্ষা ও ন্যায্য সুবিধার দাবিতে সরব হয় ফেডারেশন। তারা সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
✔ ডিজিটাল সাংবাদিকদের আইনি স্বীকৃতি প্রদান এবং প্রথাগত মিডিয়ার সমপর্যায়ে আনয়ন।
✔ স্বতন্ত্র প্রেস ক্লাব স্থাপন শুধু ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য।
✔ স্বাস্থ্য ও জীবনবীমার সুবিধা— ঠিক যেমনটা অন্যান্য সাংবাদিকরা পান।
✔ ডিজিটাল সাংবাদিকদের জন্য আলাদা প্রেস কার্ড ও সরকারি অনুমোদন— যাতে তারা পেশাগত সুবিধা পান ও কাজের স্বীকৃতি মেলে।
✔ সরকারি বিজ্ঞাপনের সুযোগ— প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের মতো ডিজিটাল মিডিয়াগুলোকেও সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্য করতে হবে।
✔ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা— রিপোর্টিং চলাকালীন ডিজিটাল সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
✔ আইনি সহায়তা প্রদান— অনেক সময় ডিজিটাল সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হন। তাই তাঁদের জন্য বিশেষ আইনগত সহায়তা সেল গঠন করতে হবে।
✔ প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ নিশ্চিত করা— কলকাতা প্রেস ক্লাব সহ অন্যান্য প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল সাংবাদিকদের সদস্যপদ দিতে হবে।
রাজনৈতিক শিবিরগুলোর প্রতিক্রিয়া
এই সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, বিরোধী শিবিরের তরুণ নেতা-নেত্রীরা, বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। ছিলেন হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবীরাও।
তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য ডিজিটাল মিডিয়ার স্বাধীনতা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন,
"ডিজিটাল মিডিয়া এমন জায়গায় পৌঁছাক যেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের পাশে থাকার দরকার হবে না। সাংবাদিকতা ও ব্যক্তিগত কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হওয়া উচিত। সরকারের কী করণীয়, সেটা আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দেব। আপনারা তথ্য তুলে ধরুন, যেখানে মূলধারার মিডিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা ডিজিটাল মিডিয়া ফেডারেশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। কেউ কেউ এই সম্মেলনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেন।
আগামী পরিকল্পনা
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,
"আমরা সমস্ত ডিজিটাল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ করে ‘গদি মিডিয়ার’ বিরুদ্ধে লড়াই করব, সত্য খবর পরিবেশন করব। এই আন্দোলন শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রতিটি জেলায় গিয়ে জেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন করব, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব।"
এই সম্মেলন শুধু ডিজিটাল সাংবাদিকদের স্বীকৃতি আদায়ের এক ধাপ নয়, বরং এক নতুন লড়াইয়ের শুরু। এবার দেখার, সরকার ও প্রশাসন কতটা গুরুত্ব দেয় এই দাবিগুলিকে।
What's Your Reaction?






