'শান্তির দূতের' হাতে ইসরাফিলের শিঙ্গা! ধ্বংসের পথে বাংলাদেশ

ইসলাম ধর্মে আছে সৃষ্টিকর্তা যেদিন মানুষের কর্মকাণ্ডে চরম বিরক্ত হয়ে পড়বেন তিনি সেদিন ইসরাফিল ফেরেশতাকে বলবেন তাঁর হাতে থাকা শিঙ্গায় ফুঁ দিতে যাতে পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যায়। ইসরাফিলকে দেখা হয় ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে। এই মুহূর্তে শান্তির দূত হিসেবে বাংলাদেশের শাসনভার অবৈধভাবে যিনি দখল করে আছেন সেই নোবেল জয়ী ড.

Dec 5, 2024 - 16:34
 0  2
'শান্তির দূতের' হাতে ইসরাফিলের শিঙ্গা! ধ্বংসের পথে বাংলাদেশ

মুহম্মদ ইউনুস ইসরাফিলের শিঙ্গা হাতে আবির্ভূত হয়েছেন বলে দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন। বিশ্বে বর্তমানে কয়েকটি শাখায় শ'খানেক নোবেল বিজয়ী আছেন। কেউ পদার্থ বিজ্ঞানে, কেউ অর্থনীতিতে, কেউ সাহিত্যে, কেউ বা শান্তিতে। যে কটি শাখায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তারমধ্যে গোড়া থেকেই বিতর্কিত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। মহাত্মা গান্ধীকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল, কিন্তু নোবেল কমিটি তাঁকে বিবেচনা করেনি। হিটলারও মনোনীত হয়েছিলেন। ভাগ্যিস তাঁর নাম বিবেচনা করা হয়নি। এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে এই পুরস্কারটি পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের পছন্দ অপছন্দের উপর । এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অগ্রগণ্য।

শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে প্রায় সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশ্বে গত একশত বছরে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের মতো সারা বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টি করার দায়ে অন্য কোন ব্যক্তি এত নিন্দিত ছিলেন না। ২০২৩ সালে মৃত্যুকালে বিশ্বের ডজন খানেক দেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় অনেক দেশে ভ্রমণের অধিকার ছিল না তাঁর। তবে আর যাই হোক কিসিঞ্জার তাঁর নিজ দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় তেমন কিছু করেনি। যা করেছেন তা নিজ দেশের স্বার্থে। জড়িত ছিলেন দেশে দেশে অনেক রাষ্ট্র প্রধান বা রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে। তাঁকেও ১৯৭৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমান সময়ে শান্তিতে নোবেল জয়ী দু'জনকে নিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। যাঁরা হয়ে উঠেছেন মানবতা ও সভ্যতার বিশ্ব নিন্দিত শত্রু। প্রথমজন মায়ানমারের নেত্রী 'গণতন্ত্রের মানস কন্যা' বলে খ্যাত অং সান সূচি, অন্যজন বাংলাদেশের শান্তির (বাস্তবে অশান্তির) দূত ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সুচির শাসনামলেও মায়ানমারে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরাম ছিল না। তিনিও রহিঙ্গাদের দেশছাড়া করার অভিযানে শামিল ছিলেন। নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের সময় শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচি নীরব থেকেছেন।

বলাইবাহুল্য, ইউনুসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের মানুষ খুশি হয়েছিলেন। যদিও কিছুদিন পরেই তারা ব্যথিত হয়েছিলেন যখন নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত ডক্যুমেন্টারিতে ইউনুসকে 'চোর' আখ্যায়িত করা হয়। তিনি নরওয়ে সরকারের একটি তহবিলের অর্থ তাদের অনুমতি ছাড়া অন্যত্র সরিয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে ইউনুস দেশেও নানা বিতর্কে জড়ান। বিতর্কের সূচনা তাঁর অবসর নিয়ে। ব্যাঙ্কিং আইন বলে সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা ছিল ৬৫ বছর বয়সে। তিনি এমনকি ৭৫ বছর বয়সেও অবসর নিতে রাজি ছিলেন না। স্বভাবতই সরকার ব্যাঙ্কিং আইন বলে তাঁকে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে অপসারণ করে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের উচ্চ আদালতে মামলা করে হেরে যান ইউনুস।

সেই থেকে তাঁর সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের বৈরিতা শুরু। ড. ইউনুস সব সময় বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে থাকতে পছন্দ করেন। ২০০৭-এ সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ড. ইউনুস 'নাগরিক শক্তি (নাশ)' নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। যদিও সেই সময় দেশে সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল। এক অভিনব কায়দায় তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে জনগণকে এসএমএস পাঠিয়ে নতুন দলকে সমর্থন করার আর্জি জানান। অনেকেই জেনে অবাক হবেন যে মাত্র পাঁচজন তাঁর উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে জবাবি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বাধ্য হয়েই তিনি প্রচলিত ধারার রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লোভ থেকে কখনও সরে যাননি।

২০০৮ থেকে শুরু করে ইউনুস সব সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের দলীয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছেন কীভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার সময় তাঁর সঙ্গে বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী হিলারির সখ্য গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল থেকে বিরাট অঙ্কের অর্থ ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনে দান করেন। এই অর্থ ক্লিন্টন দম্পতি তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেছেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হিলারি ক্লিন্টনের প্রচারে বড় অঙ্ক খরচ করা হয় ইউনুসের দেওয়া তহবিল থেকে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত হিলারি ছিলেন বারাক ওবামার পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এই সময়ও তিনি ও ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন নানা ভাবে ইউনুসের আর্থিক সহায়তা লাভ করে।

ইউনুসকে বয়সজনিত কারণে সরকার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে আইন মেনে অপসারণ করলে হিলারি ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে তা নিয়ে আপত্তি করেছিলেন। বলেছিলেন, ইউনুসকে না সরাতে। যে ফোনালাপের কথা শেখ হাসিনা একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন। সব থেকে বড় ঘটনা ছিল পদ্মা সেতুর জন্য ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাঙ্কের সরে যাওয়ার পিছনে হিলারি ক্লিন্টন ও ড. ইউনুসের ভূমিকা, যা আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে কোন গোপন বিষয় নয়। গত পনের বছর ধরে ইউনুস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্যে ও গোপনে চেষ্টা করেছেন কীভাবে বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার পরিকল্পিত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা যায়।

বিগত আগস্ট মাসে দেশে এক ছাত্র আন্দোলন তাঁকে সে সুযোগ এনে দেয়। যা শুরু হয়েছিল সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলন দিয়ে। যে দাবির সঙ্গে সরকারও একশোভাগ সহমত ছিল। আদালতের রায়ে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পর মার্কিন ইন্ধন আর ইউনুসের ইসারায় শুরু হয় শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের আন্দোলন ।

শেখ হাসিনার একটি বড় দূর্বলতা ছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি একদল ব্যবসায়ী ও আমলা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পরেছিলেন। তাঁকে তাঁরা দেশের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধকারে রেখেছিলেন। তিনি বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি বা বোঝার চেষ্টা করেননি। সেটিই তাঁর কাল হয়। যে কারণে চব্বিশ ঘন্টা আগেও বুঝতে পারেননি ক্ষমতা হারাতে চলেছেন। ইউনুস ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবার চাল ছিল নিখূঁত।

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা তাঁর নিজের বাছাই করা রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধানের উপর আস্থা রেখেছিলেন। শেষ মুহূর্তে তাঁরা তাঁকে নিরাশ করেন। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার তিনদিনের মাথায় ইউনুস যাঁদের উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়েছেন বাংলাদেশে তাঁরা আওয়ামী লিগ বিরোধী হিসাবে পরিচিত এবং কেউ কেউ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতাকারী পরিবারের সন্তান।

ইউনুস ক্ষমতা দখলের সময় বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনীতি। ২০২৬ সালে দেশটির উন্নয়নশীল অর্থনীতির তালিকায় যুক্ত হওয়ার কথা। গত চার মাসে ইউনুস ও তাঁর সহকর্মীরা সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ কবলিত যে কোনও দেশের মতোই খারাপ। বাংলাদেশের প্রথমসারির গণমাধ্যমের অনলাইন সংষ্করণে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে 'দেশের মানুষ মাছের বদলে মাছের কাঁটা কিনে খাচ্ছে'। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষিত বেকার। সার্বিক বেকারত্ব প্রায় ১৫ শতাংশের উপর। মূদ্রাস্ফিতি ২০ শতাংশের উপর। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি তলানিতে।

অবৈধ ইউনুস সরকারের অধীনে দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এই তথাকথিত শান্তির দূতের হাত ধরেই বাংলাদেশে উত্থান ঘটেছে হিযবুত তাহিরে'র মতো সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর। আর জামায়াতে ইসলামি তো ইউনুসের সার্বক্ষণিক পরামর্শদাতা। জামায়াতের একজন ইউনুসের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। দেশে বর্তমানে কোন কার্যকর সরকার নেই বললেই চলে। মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে ইউনুস ইসরাফিলের শিঙ্গায় ফুঁ দিয়েছেন যাতে বাংলা নামে দেশটা ধ্বংস হয়ে যায়।

মানুষ মনে করে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের অবশিষ্ট যা আছে এই পরিস্থিতি হতে রক্ষা পেতে হলে অবৈধ ইউনুস সরকারকে দ্রুততম সময়ে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ইউনুস হয়তো উপলব্ধি করেছেন তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে। পাকিস্তানি শাসকদের মতো তিনিও এখন ধর্মের কার্ড খেলে বাঁচতে চাইছেন। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছেন তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা। বিগত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা কোনও শাসক ইউনুসের মতো দেশ ধ্বংসকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হননি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Tathagata Reporter